বছরের গোড়ারর দিকে জানুয়ারি মাসের একেবারে শেষের দিকে বেঙ্গালুরুতে অকশন বসেছিল একাদশ আইপিএলের জন্য। সবকটি ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য কিছু সুবিধা রেখে একেবারে নতুন করে টিম গড়ানোর জন্য উদ্যোগী ছিল বিসিসিআই। ব্যাপাটা যতই ফ্র্যাঞ্চাইজিদের না পসন্দ হোক না কেন, মানতে বাধ্য। কারণ এটা বিসিসিআই’য়ের নিজস্ব টুর্নামন্টে। এই নিয়মে কিছু টিম যেমন আপতত দৃষ্টিতে লাভবান হয়েছে, তেমনই কিছু টিম তাদের পছন্দের ক্রিকেটারকে অন্যত্র চলে যেতে দিতে বাধ্য হয়েছে। আর সেই সুযোগে দুর্বল ফ্র্যাঞ্চাইজিরা তাদের শক্তি আরও বাড়িয়ে নেয় এবার।
তাদের মধ্যে অন্যতম কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। প্রীতির জিন্টার টিমকে এবার বেশ শক্তিশালী মনে হচ্ছিল আইপিএল শুরুর আগে থেকেই। প্লে-অফে যাওয়ার দাবিদারও ধরা হয়েছিল। আইপিএল ক্রিকেটের প্রথমার্ধে ছ’টার মধ্যে পাঁচটা ম্যাচ জিতে খুব ভালো জায়গায় থাকা পাঞ্জাবকে অনেকে ট্রফি জয়ের দাবিদার হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছিলেন। ঢালাও প্রশংসা চলছিল অধিনায়ক রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অধিনায়কত্ব এবং দলের মেন্টর বীরেন্দ্র সেহওয়াগের পোড় খাওয়া ক্রিকেটীয় বুদ্ধির। ঠিক তারপর থেকেই একটানা হার শুরু হয়। লিগ পর্বে শেষ আটটি ম্যাচের মধ্যে সাতটিতে হেরে বিদায় নেয় কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। একাদশ আইপিএলের লিগ টেবিলে সাত নম্বর টিম পাঞ্জাব – এটাই ২০১৮ আইপিএল মরশুমে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের পরিচয়।
এ যেন একবারে রাজপথ থেকে সটান কানাগলিতে এসে পড়া। তবে, আগামী বছর কিংস ইলেভেন টিম ম্যানেজমেন্ট অবশ্যই তাদের ভুল-ত্রুটিগুলি শুধরানোর চেষ্টা করবে – সেই আশায় করছে অনুরাগীরা! টিমের কয়েকজন ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়া জরিরি এই জন্য। আর তার পরিবর্তে কিছু ভালো ক্রিকেটার আনানো প্রয়োজন। তেমনই চার ক্রিকেটারকে নিয়ে এই প্রতিবেদন, যাঁদের স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করা হলে টিমের সেরা হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারেন। কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবকে ট্রফিও এনে দিতে পারেন এই চার তারকা!
৪. ইরফান পাঠান (ভারত)উত্তরপ্রদেশের এই তারকা একসময় ভারতীয় দলে দুর্দান্ত গতিতে উন্নতি করেছিলেন। আর সেই সঙ্গে আইপিএল ক্রিকেটেও। ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রবীন কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের সদস্য ছিলেন। ২০১৬-২০১৭ মরশুমে গুজরাত লায়ন্সের হয়ে খেলা প্রবীন এবছর আইপিএলে টিম পাননি। বল ও ব্যাটহাতে সমান দক্ষ প্রবীণের বড় সম্পদ অভিজ্ঞতা ও শেষ পর্যন্ত লড়াই করার মানসিকতা।
৩. জো রুট (ইংল্যান্ড) ইংল্যান্ডের টেস্ট দলের অধিনায়ক এবারই প্রথমবার আইপিএল খেলার উদ্দেশ্যে অকশনে নাম নথিভুক্ত করেছিলেন। কিন্তু, অকশনে কেউ তাঁকে কিনতে চাননি। ইংল্যান্ডের হয়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও বেশ সফল রুট। ২০১৬ সালে আইসিসি টি-২০ বিশ্বকাপে ছ’টি ইনিংসে ২৪৯ রান করেছিলেন ১৪৬.৫৭ স্ট্রাইক রেট নিয়ে। ইংল্যান্ড ফাইনালেও যায় সেবার।
জাতীয় দলের হয়ে ২৫টি টি-২০ ম্যাচে রুটের সংগ্রহ ৭৪৩ রান। সেরা স্কোর ৯০। ১২৮.৭৭ স্ট্রাইক রেট নিয়ে। জো এমন এক ঘরানার ব্যাটসম্যান যিনি যে কোনও ধরণের পিচে রান করতে পারেন। ময়ঙ্ক আগরওয়াল, যুবরাজ সিং ও মনোজ তিওয়ারিরা এবার পাঞ্জাব মিডল অর্ডারকে টানতে ব্যর্থ। রুটকে আনা হলে তিনি অনেক বেশি কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারবেন।
২. মোজেস হেনরিকে (অস্ট্রেলিয়া)আইপিএল ক্রিকেটে অন্যতম পরিচিত নাম। অজি অলরাউন্ডার এখনও পর্যন্ত পাঁচটি আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজির ঘরে গিয়েছেন – কলকাতা নাইট রাইডার্স, দিল্লি ডেয়ারডেভিলস, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর ও সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। ২০১৬ সালের আইপিএল ট্রফি জয়ী টিমের সদস্য হেনরিকে টি-২০ ক্রিকেটের আদর্শ ক্রিকেটার। বিগব্যাশ লিগ ও ইংলিশ কাউন্টি টিমের হয়ে বেশ কয়েকটি মনে রাখার মতো চিত্তাকর্ষক ইনিংস খেলা মোজেশকে পাঞ্জাব মিডল অর্ডারে আনলে উপকারে লাগবে।
মার্কাস স্টোইনিস এবার যেভাবে টিমকে ডুবিয়েছেন, তাতে একজন ভালো বিদেশি অলরাউন্ডার দরকার টিমে। ৫৭টি আইপিএল ম্যাচে মোজেসের স্ট্রাইক রেট ১২৮.১৭। সেরা স্কোর ৭৫ অপরাজিত। আর বল হাতে ৩৮টি উইকেট নিয়েছেন। ইকনমি রেট ৮.৩৮। সেরা বোলিং ১৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট। হেনরিকে পেস বোলিং অলরাউন্ডার। ফলে, তাঁকে ডেথ ওভারে ব্যবহার করতে পারবেন অধিনায়ক। বলের গতিতে বৈচিত্র আনার পাশাপাশি মোজেসের হাতে টো-ক্রাশারের মতো উপযোগী ডেলিভারি রয়েছে।
১. রোভমান পাওয়েল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) ক্যারিবিয়ান বিগ হিটিং অলরাউন্ডার টি-২০ ক্রিকেটের জন্য আদর্শ অস্ত্র যে কোনও টিমে। সাত বা আট নম্বরে নেমে চট জলদি ক্যামিও ইনিংস খেলতে পারার জন্য কব্জির জোর থাকা ক্রিকেটার দরকার। পাওয়েলের হাতে সেই দম রয়েছে। ২০১৭ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্স তাঁকে ৩০ লক্ষ ভারতীয় মুদ্রা খরচ করে কিনলেও, ব্যবহার করেনি।
এবছর কোনও টিম পাননি ক্যারিবিয়ান স্টার। গত মার্চে জিম্বাবোয়েতে হয়ে যাওয়া আইসিসি ২০১৯ বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ার ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে রোমহর্ষক শতরান করে খবরের শিরোনামে উঠে আসেন। জামাইকা তালাহোয়াসের হয়ে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে ২৩টি ম্যাচে ৪০১ রান করেছেন তরুণ প্রতিভা। স্ট্রাইক রেট ১২১.৯০। এছাড়া বলহাতে বারোটি ইনিংসে সংগ্রহ ৭টি উইকেট। সেরা বোলিং ৩৬ রান দিয়ে ২ উইকেট। কিংস ইলেভেনের লোয়ার অর্ডারে দারুণ সংযোজন হতে পারেন এই জামাইকান অলরাউন্ডার।